অংশগ্রহণমূলক কাজ ৬৪

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা - বৌদ্ধধর্মে পরমতসহিষ্ণুতা | | NCTB BOOK
13
13

নিচের ছক দুটি পূরণ করো।

নিজের মত জোর করে অন্যের ওপর চাপিয়ে দিলে কী ঘটে?

অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিলে কী ঘটে?

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।

 

বুদ্ধ বলেছেন-   

মা জাতিং পুচ্ছি চরণঞ্চ পুচ্ছ, কণ্ঠ হবো জাযতি জাতবেদো;

নীচাকুলীনোপি মুনী ধিতীমা, আজানিষ হোতি হিরীনিসেধো।

অর্থাৎ, কারো জাতি-সম্প্রদায় পরিচয় জানার প্রয়োজন নেই, ব্যক্তির কর্ম ও আচরণ হলো অনুসন্ধানের বিষয়, কাঠ থেকে যেমন আগুনের উৎপত্তি হয়; তেমনি কেউ নীচকুলে জন্ম নিলেও বিবেক, সংযম ও নৈতিকতার মাধ্যমে উচ্চবংশীয় আচরণ বা নিজের আচরণ পরিশীলিত ও উন্নত করতে পারেন।

 

বুদ্ধ আরও বলেছেন- 

পরম্স চে ধম্মমনানুজানং, বালো'মকো হোতি নিহীনপঞ্চো:

সন্ধেব বালা সনিহীন পঞ্চা, সব্বেবিমে দিষ্ঠিপরিক্সসানা।

নিজ নিজ দৃষ্টির অনুগামী মানুষ কলহে নিযুক্ত হয়ে নিজেদের (জাহির করে) পণ্ডিত হিসেবে ঘোষণা করে- এটি অনুচিত, যার এ জ্ঞান আছে, ধর্ম তাঁর জানা; যে এর বিরুদ্ধাচরণ করে, সে পরিপূর্ণতাহীন। পরের ধর্ম স্বীকার না করা মানে জ্ঞানহীনতার পরিচয়, নিজ নিজ দৃষ্টির দাস।

 

বুদ্ধ বলেছেন-

সকচ্ছি ধম্মং পরিপুগ্নমাহ, অঞ্চস্প ধম্মং পন হীনমাহ;

এবম্পি বিগ্নহ বিবাদযন্তি, সকং সকং সম্মুতিমাহ সচ্চং।

নিজের ধর্ম সর্বাঙ্গ পরিপূর্ণ, অন্যের ধর্ম নিকৃষ্ট বা হীন, মানুষ এভাবে ভিন্নমত হয়ে বিবাদ করে, তারা নিজ নিজ মতকে সত্য বলে মনে করে। এভাবে নিজের ধর্মকে সত্য বলে দাবি করে অন্যদের হীন ভাবা অনুচিত।

সুতরাং, জগতের সব জাতি, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সম্মিলনে গঠিত হয় বৃহত্তর মানব জাতি। যেখানে জন্ম ও কোনো ধর্মীয় মতাদর্শ বিশ্বাসের জন্য আমরা পৃথক পরিচয় সৃষ্টি করি। এই পরিচয় মূলত মানবতাকেই খণ্ডিত করে। তাই মানুষ হিসেবে সবার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার দায়িত্ব কর্তব্যবোধে আমাদের উজ্জীবিত হওয়া আবশ্যক। সবার ধর্ম বিশ্বাস থাকবে নিজের অন্তরে, আচরণ হবে সর্বজনীন কল্যাণ ও মঙ্গলমূলক। এর জন্য পরমতসহিষ্ণুতার চর্চা অত্যাবশ্যক। পরমতসহিষ্ণুতা ছাড়া এরকম সর্বজনীন সর্বঙ্গীণ কল্যাণময় লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়।

 

 

পরমতসহিষ্ণুতার গুরুত্ব

 

 

পরমতসহিষ্ণুতা, সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতাবোধ মানবজীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর চর্চা ছাড়া পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে কখনো সুন্দর মানবিক পরিবেশ গড়ে ওঠে না। তাই তথাগত বুদ্ধ সর্বক্ষেত্রে পারস্পরিক মৈত্রী ও সম্ভাব বজায় রাখার উপদেশ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে মানুষের মন উদার ও সংকীর্ণতাহীন হয়। আমাদের জীবনে এই পারস্পরিক সুসম্পর্ক বা সৌহার্দ্যবোধের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। এই সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতাবোধের কারণেই মানুষের অন্তর থেকে শত্রুতা ও হিংসাভাব দূর হয়। মনে হিংসার পরিবর্তে সম্প্রীতিবোধ সৃষ্টি হয়। মানবিক মূল্যবোধে উদ্বোধিত মানুষের অন্তর্জগৎ। এ প্রজ্ঞার আলোয় একে অন্যের মত ও আদর্শকে বিবেচনা করবে। কর্ম ও পরিশীলিত আচরণেই ব্যক্তির প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়। তথাগত বুদ্ধ কথা বলেছেন-

কম্মুনা বত্ততি লোকে, কম্মুনা বত্ততি পজা,

কম্ম নিবন্ধনা সত্তা, রথস্পাণীব যাযতো। (বাসেষ্ঠ৬১)

কর্মের দ্বারা জগতের উৎপত্তি, কর্মের দ্বারাই মানব জন্মের সৃষ্টি; চলন্ত রথের চাকার মতো সত্ত্বগণ কর্মের মধ্যেই আবদ্ধ থাকে।

সুতরাং এখানে জন্ম বা সম্প্রদায়ভিত্তিক পরিচয় দিয়ে মানুষকে বিভাজন করা যায় না; এতে মূলত মানবতারই বিভাজন হয়, মনুষ্যত্ব ও মানবিক মূল্যবোধের অখণ্ডতাই বিভাজিত হয়। পরমতসহিষ্ণুতা এই বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে। সেজন্য পরমতসহিষ্ণুতার অনুশীলনের গুরুত্ব অপরিসীম। তথাগত বুদ্ধ আরোও বলেছেন-

ন পরো পরং নিকুক্সেথ নাতিমঞ্চেথ কথচি নং কিঞ্চি,

ব্যারোসনা পটিঘসঞ্চা নাঞ্চমঞ্চস্স দুদ্ধমিচ্ছেয্য। (করণীয় মৈত্রীসূত্র-৬)

 

অর্থাৎ, একে অপরকে বঞ্চনা করো না, কাউকে কিছুতেই কায়বাক্য দিয়ে ঘৃণা করো না, ক্রোধ ও হিংসার কারণে কাউকে অনিষ্ট করার ইচ্ছা করো না। এভাবে বুদ্ধ পারস্পরিক সমন্বয় সাধন করে পরমতসহিষ্ণুতা জীবনের সর্বক্ষেত্রে অনুশীলন করার উপদেশ দিয়েছেন। আমাদের বর্তমান সামাজিক সংস্কৃতিতে পরমতসহিষ্ণুতার চর্চা করা অপরিহার্যভাবে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে আন্তঃসামাজিক ও আন্তঃসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে এটির অনুশীলনের অশেষ গুরুত্ব রয়েছে 

Content added || updated By
Promotion